DEHLIJ

বিদ্যুৎ মুখার্জী

এই জনমে  (ধারাবাহিক) 



৪ – ইতি নাট্যাভিনয় তন্ত্রে চতুর্থ জনম  



দারুণ অভিনেতা ছিলেন নৃপেণ কাকু, ডাক্তার নৃপেণ চক্রবর্তী, সোনাই-দিঘী করার পর শ্রীমতী অপেরা সে বছর বাঙালী যাত্রা করবে । শুভেন্দু কাকু আরো কেকে এসে বাবাকে ধরলেন । বাবা বুঝিয়ে বললেন : সুবিমল দা নাটকে আমার গুরু, এই প্রথম তিনি জালীয়ানতে আমায় ডেকেছেন, তাঁকে অস্বীকার করতে পারি না, তোমরা এক কাজ করো ! নৃপেণ কে ধরো !...ওহ সে বছর জালিয়ান যেমন দুবার দেখেছিলাম সেরকমই বাঙালী ও দুবার । নৃপেণ কাকুর দাঊদ খান দেখার জন্য.. কিছু কিছু রোল মনে থেকে যায়, শচিপতি কাকুর  " ধর্মের বলী " তে ফরিদ খান ( রমণী জেঠুর উদ্যোগে দক্ষিণীর বই ), আশিস মজুমদার এর বিদ্যাসাগরে সাহেব, যতীন দাসের "সোনাই দিঘী " তে ভাবনা কাজী, কলুদার শাহ সুজা (সীমান্ত) পার্থ দারও সীমান্তে আকবর খান, বাবলু দার কালা পাহাড় আর গিরীশ ঘোষ, আর উমা কাকীর কোনটা নয় ? সবথেকে বিখ্যাত বোধ হয় সীমান্ত আর নটি বিনোদিনী । উমা বিট আর মায়া হোর কে আমার সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ( অবশ্যই দিল্লীর বাংলা নাটক যাত্রা ) দের মধ্যে মনে হয় ।  প্রতাপ জেঠুর ( প্রতাপ সেন ) এর কাছে দুএকবার বাবার সঙ্গে গেছি আর হরিহর জেঠুর সঙ্গে তো প্রায়ই দেখা হতো সেসময়, ওই রকম অদ্ভুত দুজন নাট্য ব্যক্তিত্ব, অথচ মৃদু স্পষ্ট ভাষী আমি আমার থিয়েটার এর জীবনে কম দেখেছি । নাড়ু দা, মুক্তি দা তো বটেই ব্যাক স্টেজ এ, কিন্তু যাত্রায় সবার অলক্ষ্যে থাকতেন সব থেকে দরকারি মানুষগুলো, ডিরেক্টর , একমাত্র ফনি কাকা প্রকাশ্য স্টেজ এ আসতেন, বাকি রাধানাথ ব্যানার্জি, পরেশ দাস, জগন্নাথ দা এঁরা অলক্ষ্যেই থেকে যেতেন । সাধারণ দর্শক স্টেজ এ অভিনেতা দের চিনতেন, আর এঁদের কন্ট্রিবিউশন আর হাড় ভাঙ্গা খাটুনির কথা জানতেন এই শিল্পীরা ।


একজনের কথা একটু আলাদা করে বলি, অভিজিৎ দা, পরিচালক অভিজিৎ ভট্টাচার্য (অঙ্গীকার) মায়ের তখন অসুখ, বাবা রাউরকেলা, পিসেমশাই মারা গেছেন, ডাক্তার ঘোষাল ও দেশের বাইরে ।  অনঙ্গ তখন ধরে নিয়ে গেল, রিহার্সাল এ অভিজিৎ দার ছাদে । উনি এলেন একটু পর, অনঙ্গ একটু ভালোমানুষ গোছের ছিল, ইনিয়ে বিনিয়ে আমার অসুবিধার কথা বলতেই  - বললেন : কী আশ্চর্য ! প্রবলেম ওর আর তুই কাঁদছিস কেনো ? কই ও তো কাঁদছে না ! অতি দুঃখেও বেদম হাসি পেলো, তারপরই রিহার্সাল এর সবাইকে সম্বোধন করে বললেন : ভাইবোনেরা ! আমি একটা দরকারি কাজ করছি, রিপোর্ট পড়ছি, যদি একটু শান্ত থাকো ! একটু ডিসিপ্লিন । সবাই দিব্যি  ' আচ্ছা দাদা ' বলে চুপ করে গিয়েছিল।  কিন্তু উনি আরেকটা কথা সংযোজন করলেন : জানি, ডিসিপ্লিনের কথাটা তুলে আমি মস্ত রিস্ক নিচ্ছি !.... ব্যাস ! আর যায় কোথায় ? সারা ছাদ হাসিতে ফেটে পড়লো । সুযোগ বুঝে আমিও .. তারপর খসখস করে একটা কাগজে কিছু লিখে হাতে দিয়ে বললেন, এত নঃ উইং এ ডাক্তার চ্যাটার্জি আছেন, মাকে নিয়ে কালই যাবে, ১০ টায়, আমিও থাকবো, আরে কি আশ্চর্য, সিঙ্গাড়াটা ঠাণ্ডা করছ কেনো ? তারপর পিঠ চাপড়ে বললেন : চিন্তা নেই, আমি রিপোর্ট পড়ে নিয়েছি, রাতারাতি কিস্যু হবেনা, এই ওষুধটা এখন দাও, চা খাবেতো ?.... আশ্চর্য হলাম এই ভেবে মানুষটা একদিকে সিরিয়াস আবার অন্যদিকে রসিকতা করে চাপ কমিয়ে দিচ্ছেন, আবার একটু পর এতবড়ো যাত্রা পালার রিহার্সাল নিয়ে পড়বেন, কাল সকাল হতেই হসপিটাল ছুটবেন !


অসামান্য নাট্যকার দেখেছি সেসময়, হরিহর ভট্টাচার্য, পুতুল নাগ, জগদীশ চক্রবর্তী, স্মরজিৎ দত্ত, আর নাট্যকালের স্ক্রিপ্ট গুলো বোধ হয় সেবাব্রত দা লিখতেন, পরে বলিষ্ঠ নাট্যকার বলতে ডক্টর শিশির দাস আর তড়িৎ এর প্রথম দিকের স্ক্রিপ্ট গুলো, অসত্যকাম, ধ্বস ইত্যাদি, এমনকি ওর বিতংস বেদনা ও দেখলাম এই সেদিন, এত বছর পর ।


সবথেকে আশ্চর্য ব্যাপার যেটা আমার কাছে আজও লাগে সেটা নির্মল ( বিট ) কাকু, বৈদ্যনাথ দোলুই বা সিধু জেঠুর সহজতা, ওঁরা যে কি ক্লাস এর আর্টিস্ট, সে সম্বন্ধে বোধ হয় ওঁরা নিজেরাই ওয়াকিবহাল ছিলেন না । আর মনে পড়ে শংকরদাকে । শংকর গৌতম, স্টেজে ওরকম গানের গলা আর দুটো দেখলাম না । দিব্যেন্দু ( মৌলিক ) কে দেখেছিলাম " জুলিয়াস সিজারের শেষ সাত দিন " নাটকে, গত বছর দেখা হতে মনে পড়ে গেলো : চলো টিটাস, কুকুর রেসের ময়দানে চলো...অগ্রগামী তে সামু দা " প্যান্ট ও মাইম " করিয়েছিল, আর যাত্রার আসরে আরও দুই রাজপুত্রের মতো চেহারার যুবকের আবির্ভাব হোলো, এক নিলয় সেন আর দুই সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত, সিধুদার চেহারায় আমি অবিকল আমার সেজকাকা কানাই মুখোপাধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি পেতাম, কিন্তু আমাকে সেসময় সব থেকে নাড়িয়ে ছিল " সমুদ্র শাসন " এ শান্তনু রায় চৌধুরী, সম্রাট সমুদ্র গুপ্তের ভূমিকায় : 'মহামন্ত্রী বসুবন্ধু ! আপনি কাল ভোজ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন কেনো ? সিংহল রাজ মেঘ বর্মণের দূতের সম্মানার্থে ভোজ সভা ছিল, আপনি এলেন না কেনো ? ....অবশ্য ভোজসভা জমেছিল ! কুক্কুট ও গোমাংস ( রাজ পুরোহিতের কাছে গিয়ে ) দুইই অতি উপাদেয়' !.....অতঃপর কলোহন যখন প্রমাণ করে দিলেন, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে তখন বেদ মিথ্যা হয়ে যাবে এই ভয়ে মন্ত্রী পুরোহিত সবাই উদ্বেগ নিয়ে বলছে : ওকে পথেই বন্দী করুন তখন সমুদ্র গুপ্তের সেই উক্তি : খেপেছেন মহামন্ত্রী ! তাহলে পুণ্ড্রবর্ধন থেকে পুরুষপুর যতো ঋষি মহা ঋষির দল আমায় রে রে করে তেড়ে আসবে ? পুরোহিত : তবে উপায় সম্রাট ? সমুদ্র গুপ্ত : হুঁ মরতে কলোহণ কে হবেই, আমি জানি কলহন মরবেন, কারণ সূর্যশিকারে একমাত্র সম্রাটেরই অধিকার, কিন্তু নিভৃতে নিজের কাছে তুমি কি জবাব দেবে ব্রাহ্মন ? এ কথা কি মানবে যে তোমার সব তত্বই মিথ্যা ? পুরোহিত : বোল না ! ও কথা শ্রবণেও পাপ ! সমুদ্র গুপ্ত : মুখ ফুটে আর হয়ত কোনোদিন বলবোনা ব্রাহ্মন, কিন্তু একথা কি স্বীকার করবে তোমরা মিথ্যাবাদী ? সহস্র সহস্র বছর ধরে মিথ্যার ব্যবসা করে এসেছ...আর আমি ? মুখ ফুটে না বললেও জানবো যে বেদ মিথ্যা, পুরাণ দেব দেবী সবই মিথ্যায় ঘেরা এক আড়ম্বর মাত্র !...শুধু এক অন্ধকার স্থুলবস্তু এই পৃথিবী ! তারই মাঝখানে আমাদের উদয়, আমাদের বিলুপ্তি, আর কিছু নেই.....


"  লড়াই ! লড়াই আমি অনেক করেছি..." অনেকক্ষণ পর স্টেজে মুখ খুললেন সেই বৃদ্ধ সৈনিক, আর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করলেন, ওঃ কি থ্রো রে বাবা ! সামু দা জয়ন্ত দা র ছিল ভরাট কণ্ঠস্বর, কিন্তু ইনার তাতো নয়, তথাপি কিকরে এতো মনোমুগ্ধকর সংলাপ বেরোয় যা থেকে কান সরানো যায় না, আর কি অদ্ভুত বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ! প্রতিটি কথা যেন আছড়ে পড়ছে স্টেজে । অভিনয়ের ডেফিনেশন টাই যেন পাল্টে দিচ্ছে, তিনবার  "না" এই শব্দটা উচ্চারণ করছে তিন ভাবে, উৎপলদা, জয়ন্ত দা আর দিলীপদার পর ইনারও অভিনয়ের স্টাইল আমাকে স্পর্শ করলো ।  সেদিন থেকে আজকের দিন অবধি আমি তাপস দার ভক্ত, তাপস চন্দ কোনো বইতে আছে জানলেই আজও মনে হয় নতুন কিছু পাওয়া হবে ।


অমর(হোর) কাকার সুবাদে যাতায়াত শুরু হলো দেবুদা , শৈলেন সাহা আর ব্রজেন ( ভৌমিক ) কাকার বাড়ী, দেবু (সেন ) একদিন বললেন কাল আসিস নাটক দেখতে, কয়েকজন ইয়ং ছেলে মেয়ে জুটেছে, ওদের নিয়ে বই করছি ( নাটকটা ছিল যতদূর মনে পড়ছে  ' কাকাতুয়া রহস্য ') , সেই প্রথম "আমরা কজন" এর বই দেখলাম...অদ্ভুত মানুষ ছিলেন অমর হোর, একদিন মাথায় ঢুকলো, "ব্যাটা ঘোটির পোলা, আয় তোরে শুঁটকি মাস রাইধ্যা খাওয়াই" মায়া কাকী যত বলে ওকে শর্ষে ইলিশ টা খেতে দাও না বাপু ।  দেখছো ছেলেটা ঠিক করে খেতে পারছে না ।  কে কার কথা শোনে ! কাকু বলে : খাবা না মানে ! ওর বাপ খাবা !!....তারপর আবার  " কি রে , বালও না ! ".... ও বাবা, আবার ভালো ও বলতে হবে !!!..... ওদিকে ইলিশের লোভ, কাকুর ফরমান, ' শুটকি না খাইলে হিলিস পাবা না ' ....কোনো মতে নিশ্বাস বন্ধ করে আসন্ন সুস্বাদু ভোজনের সম্ভাবনার কথা ভাবতে ভাবতে শুঁটকি গলধকরণ করলাম । অমর কাকুর কথা পরে আবার এসেই পড়বে নানা প্রসঙ্গে, এখন একটু অন্য গপ্পো ।


তিন টাকা কিলো মাংস আমি আর-কে-পূরম থাকতে কিনে এনেছি ক্লাস সিক্সে থাকতে ।  রবিবার মানেই একথালা ভাতের সঙ্গে একবাটি ঝোল আর দুটো মাংসের পিস (একটা চাব থাকলে আরো ভালো) আর দুটো বড়ো আলু, ব্যাস ! মনে আছে হলুদ আর তেল মাখিয়ে মাংস ফেলে রাখা হোতো রোদ্দুরে, শীতকালে কাঁধে বাঁক নিয়ে মুঙ্গফলী ওলা হেঁকে যেতো । সঙ্গে থাকত গুড় কি পট্টি । আর এখন যেটা আমরা ২০০ টাকা দিয়ে পি ভি আর এ সিনেমার হাফ টাইমে কিনি পপকর্ন নাম দিয়ে, সেটা অতোটাই দিতো বালিতে ভেজে । ছেলেবেলায় তন্দুরের উনুন বানাতো মাটিতেই, আর পাওয়া যেত কামরাঙা আর চুরান । ট্রেনে কেউ সিগারেট খেলে পলিউশনের কথা ভাবত না আর ইঞ্জিন চলতো কয়লায় । কিম্বা ডিজেলে । পরে এসেছে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন। কলেজ জীবন থেকে একাই কলকাতা যেতাম, ইচ্ছে করে দুপুরে বেরুতাম ফাঁকা লোকালে চাপবো বলে । কখনো সোনারপুর কখনো বনগাঁ কখনো ভদ্রেশ্বর কখনো নৈহাটি অথবা ভোরের গাড়ি ধরে রানাঘাট শান্তিপুর...দিল্লীর ট্রেন বর্ধমান ছাড়ালেই একরাশ কালো মেঘ কোথা থেকে ছুটে আসতো । আর থার্ড ক্লাসের খোলা জানলায় একরাশ হাওয়ার সঙ্গে বর্ধমানের চা এর ভাঁড়... প্রপার কলকাতায় ঘুরতাম  কলেজ স্ট্রিট, বই পাড়া, বাংলা সিনেমা আর থিয়েটার দেখার লোভে, ফেরতা কবিরাজি কাটলেট, কিংবা একরাশ তেলেভাজা কিনে বাড়ি এসে মুড়ি মেখে সবাই হইহই করে ছাদে মাদুর পেতে বসা চা সহযোগে ।

প্রবীর আর প্রদীপের জুটি ভালো লেগেছিল ফনিকাকা যখন আবার করে " টিপু সুলতান" যাত্রা করালেন, একজন মশিয়ে লালী ( প্রবীর রায় ) আর অন্যজন টিপু ( প্রদীপ গাঙ্গুলি ), এছাড়া স্বপন ঘোষের হিটলার ( একনায়ক ), নব নাট্যম এর " ঈশ্বকের আশায় " ও " অথ হৃদয় ঘটিত " এই ২য় বই টায় সামুদার রোল... আর আমাদের গ্রুপ এর কি হোলো ? সেটা বলতে গেলে আরো একটি পর্দা উন্মোচন করতে হয়, যেটা খুব দামী, তাই সেটা আগামী পর্বের জন্য জমা রাখলাম..শুধু মনে আছে গরমের দিনে ছাদে বিছানা পাতা হতো, একবার আমার ছোট মামা কায়দা করে বাগানে গিয়ে শুলো কাকাদের সঙ্গে, মাঝ রাতে কুঁজো উল্টে সে এক কাণ্ড, চোর চোর রব।  সেদিন মার খেতে খেতে বেঁচে গিয়েছিল, আর ওই কুঁজো আমাকে তিনখানা বয়ে নিয়ে যেতে হোত কলকাতায় । আমার লাগেজ বলতে একটা ব্যাগ, কিন্তু এক্সট্রা লাগেজ ৩ খানা কুঁজো । বাবার হুকুম, একটা পিসির বাড়ী, একটা মামা বাড়ী আর একটা মাসির বাড়ী যাবে । হাওড়ায় নেমে লোকালে তো চড়লাম, কিন্তু ওই ভিড় ট্রেনে বালি স্টেশনে কুঁজো নামায় কার সাধ্য....গরমেই যাত্রার মহড়া শুরু হয়ে যেতো, বাড়ি ফিরে রুটি খাবার পর লেংড়া আম নিয়ে সে কি গপ্পো বাবা কাকার বাকি সকলকে, আজ রিহার্সাল এ কিকি হোলো...। সেদিন টুলা দা বলছিল কে একজন বউ এর নতুন শাড়ি ছিঁড়ে কোমর বন্ধ বানিয়েছিলেন ।  কাকাকেও বহু দেখেছি মা কাকীর বেনারসির শ্রাদ্ধ করতে । বাবা ছাদে শুয়ে আগের দিনের গপ্পো বলতেন, রায় সাহেব ভুবন মুখুজ্জের ফিটন দাঁড়িয়ে থাকতো স্টেশনের বাইরে । কেনো ? না কোনো দুঃস্থ বাঙালী ছেলে চাকরীর সন্ধানে দিল্লী এলে তার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা যতদিন না সে চাকরী পায় । 


৪৫ সাল পঞ্চাশ সালের গল্পো তো আজকের নয়, আমারও জন্মের আগের । যেসময় ক্লাব বলতে ছিল " চতুরঙ্গ" "মিলন সমিতি" "কাশ্মীরি গেট বেঙ্গলি ক্লাব" "কালীবাড়ি" বা "করোলবাগ বঙ্গীয় সমাদের মতো কিছু নাট্য গোষ্ঠী কথা প্রসঙ্গে টলী (সেন ) ইভা (নাগ) পিসিদের আর অমর (হোর ) আর বাবার বলা একটা কথা মনে পড়লো, হয়তো পড়তো না, কিন্তু টুলা দা সেদিন গোপাল বাবুর প্রসঙ্গ তুলে স্মৃতিকে খুঁচিয়ে দিল, বাবা অনেক সময় নিজের অল্প বয়সের স্ক্রিপ্ট যথা সিরাজ, টিপু বা বঙ্গের বর্গী আওড়া তেন, কখনো বা মাইকেল, কিন্তু একদিন শুনলাম অন্য কিছু, আর যাই হোক মাইকেল সিরাজ বা টিপু সুলতান নয়, জিজ্ঞেস করাতে বললেন এসব গোপালবাবুর বলা ব্লাঙ্ক ভার্স...শিবাজী, বাজিরাও, রাজীয়া...কান পেতে শুনলাম..কি দুর্ধর্ষ ধ্বনিক্ষেপ : উত্তাল তরঙ্গ মই ভিসনা নর্মদে, ফেনিল রাক্ষসী মুখে ছুটিছ কোথায়...? অথবা : আশীর্বাদ করো মহামতি আর আমি নহি ব্রাহ্মনের নিরীহ সন্তান...বা : তানাজি সাজাও কামান ! কিম্বা : শোনো পিতা শোনো মাতা , দেব দানা ডাকিনী যোগিনী, সবে মিলি হও যদি ব্রাহ্মন সহায়, দুরাত্মা জাফর শূন্য করিব সংসার.... ।  ব্ল্যাংক ভার্স শুনতে শুনতে আর আকাশে তারা গুনতে গুনতে কতবার ঘুমিয়ে পড়েছি হাসনু হানার গন্ধে বিভোর ঠাণ্ডা প্রাকৃতিক এসি চলার মত খোলা ছাদে । 



-------------------------------------------
ক্রমশঃ  পরের সংখ্যায় পঞ্চম জনম । 


No comments

FACEBOOK COMMENT