DEHLIJ

সৌমিত্র চক্রবর্তী

 আমার অলিভ বিচরণের মিনিটেরা

 


 


মেট্রোর থিকথিকে কামরায়

শরীর থেকে বেরিয়ে প্রাণপণে

সেই চেনা চেহারা খুঁজেই চলেছে

আমার দুই আফ্রিকান আইবল।

দেহ সিনিয়র সিটিজেনের

অবৈধ সিটে বসে নন এসির

খরচ বাঁচানো রেলের বজ্জাতির

মুন্ডুপাত করতে করতেই

নিজেকেই প্রবোধ দেয়,

সাদা সীমান্ত পেরোনো

ফ্লার্ট করে বেড়ানো কোনো

কচি খোকা এলে নাহয়

দাঁড়িয়েই চলে যাব।

এর তার বগলের ফাঁকে

গুরুস্তনীর মোটাসোটা বোঁটা ছুঁয়ে 

ভারী দুই জংঘার নরম আগ্নেয়শিলার

মধ্যপথ দিয়ে যেতে যেতে

আপ্রাণ খোঁজ জারী থাকে দুচোখের।

সেই চার সকালে ঘুম ভাঙা

মস্তিষ্কের শতরঞ্জ খোপ

এলিয়ে পড়ছে বারবার,

একসপ্তাহের বাসি দাড়ি

আর ঘেমো শার্ট কে ডজ করে

ভাবনারা যখন হাক্লান্ত,

রবীন্দ্রসদন মেট্রোর প্ল্যাটফর্ম এ

তখনই দেখলাম তোমাকে

তৃতীয় বিশ্বের খোলা জানলা দিয়ে।

চুলচূর্ণ উড়েছে মুখের আশেপাশে

নাকের ওপরে বিন্দু ঘাম

আর একরাশ ক্লান্তি নিয়ে

হেঁটে চলেছ তুমি

সারাজীবনের সমস্ত অধরা অধ্যায়ের  

নাদেখা সিঁড়ির খোঁজে।



শরণ্যে


অনেকদিনই হলো ছড়াতে ছড়াতে সুতো

শুরু নেই, শেষ নেই, 

নিরালম্ব শূন্যে কবন্ধ ধড় ছটপট করে।


এখন মাঝেমধ্যে নিম্নচাপের

ঝমঝম বৃষ্টি নামে অরন্যপ্রান্তের টিনের চালায়,

ভয়ার্ত শজারু ইতিউতি দেখে

বেরিয়ে আসে একান্ত গোপণ

বাসার কোল ছেড়ে,

বৃষ্টির আওয়াজ, শজারুকাঁটার আওয়াজ

মিলেমিশে ঝমঝম ঝমঝম...


অপার্থিব আলো গাছের ভিজে যাওয়া

পাতা বেয়ে নেমে আসে মাটির গায়ে।


পৃথিবী রূপকথা হলেই

ঘন্টা বেজে ওঠে ঢং ঢং...

এবার সমস্ত ছড়ানো সুতো

গুটিয়ে নিজেরও খোলসে

ফেরার পালা।




আনসময়ে


যাব বললেই যাওয়া যায়?

পা বাড়ালেই কুডাক ডেকে

মুখের ওপর দরজা বলে "চোপ"!

যাব ভাবলেই ভাবলেশহীন

মাছের চোখ থুতু ছেটায়।

যাওয়ার কথা পাড়তে গেলেই

আগাপাস্তলা দুরমুস 

বইতে থাকে টাইফুন।

পায়ের আঙুল রাস্তা ছুঁলেই 

রাস্তা নিজেই গুটিয়ে যায়,

শিরদাঁড়ায় নামতে থাকে

প্রতিদ্বন্দ্বী বরফকুচি।

যাব বললেই মানুষমুখ

অবসাদে নেকড়ে হয়।

প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই

বন্দুকনল ঘুরেই ফায়ার।

শব-বিষাদ আঁকড়ে ধরে

যাওয়া হয়না যাব বললেও।



2 comments:

  1. ধন্যবাদ, শুভকামনা সতত দেহলিজ পরিবার কে।

    ReplyDelete
  2. অনবদ্য ভাবনার কবিতা দুটি...

    ReplyDelete

FACEBOOK COMMENT