DEHLIJ

রীতা বিশ্বাস পাণ্ডে

খিধা 




শাম্মি আর চিন্নি ছোটবেলা থেকেই একে অন্যকে   চিনতো। বড় হবার পর দুজনের প্রথমে বন্ধুত্ব হল আর তারপর ভালবাসা। দুজনের একটা জিনিষ কমন ছিল সেটা হল দুজনেরই আই কিউ কম ছিল। কিন্তু ভালবাসার জন্যে আই কিউ কোথায় লাগে।শাম্মির মা প্রথমে এদের ভালবাসা কে বিশ্বাস করতে চাননি। উনি চিন্নির মায়ের বন্ধু ছিলেন।চিন্নির মা সব সময় অসুস্থ থাকত। স্কুল থেকে আসার সময় চিন্নির উৎকণ্ঠা হত বাড়ি গিয়ে ও মাকে আদৌ দেখতে পাবে কিনা। তারপর চিন্নির সাত বছর বয়সে চিন্নির মায়ের মৃত্যু হয়ে যায়। তখন থেকে ওর দিদিমা ওকে দেখা শোনা করতে লাগলেন। এই আই কিউ না থাকার কারণে অথবা বুদ্ধি কম হবার কারণে ও সবার কথার ঝালসাতে এসে যেত। ওর   দিদিমা সব সময়  ওকে আগলে রাখতেন।তাই শাম্মি যখন বিয়ে করতে চাইল দিদিমা মানা করলেন না। বিয়ে দিয়ে  দিলেন।  বিয়ের পর ওর মানে চিন্নির মনে হল ও সব পেয়ে গেছে। বিয়ের পরে ওদের বাচ্চা হল।শাম্মি যথাসম্ভব চেষ্টা করতো সংসারের সমস্ত খরচাপাতি উঠাতে কিন্তু সব সময় সেটা হয়ে উঠতে পারত না। বাচ্চাটির পর্যাপ্ত খাওয়া সে সব সময় জোটাতে পারত না।  কিন্তু এক মাস  আগেই বাচ্চা  হয়ে যাওয়াতে বাচ্চাটির শরীর ভাল থাকতো না। ঘরে ওর দেখা  শোনা করা অসম্ভব হত। বেবিকেয়ারে রাখার মতো পয়সা ওদের কাছে ছিল না। খুবই মুস্কিলের মধ্যে দিন কাটছিল ওদের। চিন্নির সমস্ত স্বপ্ন যেন শেষ হয়ে গিয়েছিল। যেরকম ও ভেবেছিল জীবন সম্বন্ধে তার কিছুই হচ্ছিল না। ও সারাদিন বাচ্চাটিকে সামলাত আর বাচ্চার দেখাশোনা করত। ওর আই কিউ কম হবার কারণে ও নিজেকে এডজাস্ট  করতে পারছিল না। শাম্মি কোন ছোট খাটো কাজ করত।বোকা শাম্মি বুঝতেই পারত না যে তার সংসার চালাবার জন্যে তার আর কিভাবে একটু বেশী কামাই করা উচিৎ।আর যা হবার তাই হল। সমস্ত খর্চা পূরণ করতে গিয়ে কয়েকমাসের ভারা জমা পড়ে গেল। বাড়ি ছাড়ার নোটিস পেল।
এইসবের কারণে চিন্নি ভাবল বিপদ কম করতে হবে। তার মনে হল বাচ্চাটি সব বিপদের মূল কারণ হবে। তাই বাচ্চাটিকে মেরে ফেলবার কথা ওর বোকা মাথায় ঘোরাফেরা করতে লাগল। বাচ্চাটি সারাদিনই প্রায় কাঁদত।চিন্নি সেই  কান্না থামাবার জন্যে শুরু শুরুতে চেষ্টা করতো কিন্তু তারপর সে হাল ছেড়ে দিয়েছিল। এবার বাচ্চাটিকে সে চুপ  করাতে কোলে তুলে নিল কিন্তু বাচ্চাকে সে চুপ করাতে পারল না।আর চিন্নি রাগে বাচ্চাটিকে  জোরে বুকের মধ্যে চেপে  ধরল এতে করে বাচ্চাটির ঘাড়ের হাড্ডি ভেঙ্গে গেল কিন্তু তথাপি সে মরল না দেখে চিন্নি তাকে বেবিকটে রাখল   তারপর বালিশ দিয়ে ক্রন্দনরত বাচ্চার মুখ চেপে ধরল। চিন্নির যখন মনে হল যে বাচ্চা মারা গেছে তখন সে চিৎকার   করে শাম্মিকে ডাক দিল। “ শাম্মি দেখো এর শ্বাস পড়ছে না” শাম্মি দৌড়ে এলো । ভীষণ ঘাবড়ে গিয়ে শাম্মি ডাক্তার ডেকে পাঠাল।চিন্নির আই কিউ কম হবার দরুন চিন্নি শাম্মিকে ডাক্তার ডাকতে মানা করলো না। আর সেটাই চিন্নির জন্যে কাল হল। ডাক্তার বলল বাচ্চার ঘাড় ভাঙবার জন্যে তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ এলো। চিন্নি আর শাম্মিকে অনেক  সওয়াল জওয়াব করা হল। তারপর দুদিন পর পুলিশ হেড কোয়ারটারে ফোন এলো এক অজানা নাম্বার থেকে। “ হ্যালো আমি সাব্রিনা বলছি। আমি জানি বাচ্চাটির মৃত্যু কি ভাবে হয়েছে। চিন্নি আমাদের প্রতিবেশী। যেদিন বাচ্চাটির মৃত্যু হয়  সেদিন আমি আমার কিচেন গার্ডেনে কিছু করছিলাম। হটাৎ চিন্নিদির বাচ্চার কান্না শুনে আমার চোখ স্বাভাবিক ভাবেই তাদের খোলা জানালাটার দিকে চলে যায়। দেখি চিন্নি তার বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে জোড়ে দাবাল আর তারপর  বাচ্চার বিছানাতে বাচ্চাকে রেখে দিল আর একখানা বালিশ উঠিয়ে কি যেন করল। বাচ্চার কান্না ততোক্ষণে থেমে গিয়েছিল তাই আমি ভাবলাম যে বাচ্চাটি হয়তো শুয়ে পড়েছে। কিন্তু এখন দেখছি ব্যাপারটা অন্যরকম।“ এটা শোনার পর পুলিশ সাথে সাথে ঘটনা স্থলে আবার গিয়ে পৌঁছয়। চিন্নি পুলিশ দেখে ভেঙ্গে পড়ল আর এবার কোন জোরাজোরি করতে হল না। চিন্নি নিজেই সব বলে দিল পুলিশকে।
আই কিউ কম হবার দরুন চিন্নি সংসারের অসুবিধা গুলি কম করার জন্যে এধরণের জঘন্য কাজ করল।বিপদের সময় কি ভাবে লড়াই করতে হয় সে সেটা বুঝতেই পারল না।
এই জঘন্য কাজের জন্যে তার বিনা পারোল আজীবন জেল হয়ে গেল।কিন্তু মানসিক অবস্থা ঠিক নয় বলে তাকে শুধু  পনেরো বছর জেলে রাখা হয় আর তারপর তাকে কোন শুধার গৃহে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  

No comments

FACEBOOK COMMENT