DEHLIJ

কৌশিক সেন

 পাটিগণিত

 

-১-

দেখতে দেখতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছিলো আলো। আমি শুন্য থেকে খোঁজবার চেষ্টা করছিলাম,
আমার থেকে মেধার দূরত্ব কতোটা। মাইলফলক গুনে গুনে পরখ করছিলাম আলোর উৎকর্ষতা।
সর্বত্র তখন ছেড়া ছেড়া রোদের পোশাক। কুড়িয়ে নিই। নিপুণ সেলাইয়ে জুড়ে নিই প্রাচীন উপবৃত্ত।
সংযুক্ত আকাশ রচনা করি গুহার মাথায়।
-২-

এখানে কিছুটা ছায়া। কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে। ইতিউতি ছড়ানো ছেটানো সরীসৃপের খোলস। এইসব বিয়োগ
করবো বলে কয়েক শতাব্দী ব্যাপী পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশান বানিয়ে এনেছিলাম। একটা একটা
করে স্লাইড ঝরে পরেছে, দূরে নীল পাহাড়ের পশ্চিম ঢালে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে কোথাও, বেশ বুঝতে
পারছি।

-৩-

সমুদ্র বলতে কিচ্ছু তৈরি হয়নি তখনও। সুবিশাল জলভাগে আমাদের নিরাপত্তাহীন সহাবস্থান।
এককোষী শরীরে তখন আদিম ভালোবাসা। গোপনে দুয়ের ঘরের নামতা মুখস্থ করে চলেছিলাম, যদি
কাজে আসে! জটিল গুণিতকে উপচে পরবে অপত্যস্নেহ। এরপর স্বপ্ন দেখবার ধারাপাত নামাবো
নিবিড় অন্তরঙ্গে…

-৪-

গৈরিক ঝাণ্ডা উড়িয়ে আর্যাবর্ত ভাগ করে ছুটে গেছে অবতারেরা। জ্বলন্ত ধানক্ষেতে একাকিনী
শায়িতা মৃত্তিকার কন্যা। এখানে কোনো মহানগর নেই, নেই কোনো অত্যাধুনিক উপনগরী। দূরের
ধ্বস্ত গণ্ডগ্রাম থেকে এসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে কুমড়ো ফালির মতো বিভাজিত রোদ্দুর। এখানেই
প্রাসাদের ভিত খনন করি তবে!


 পদার্থবিদ্যা বিষয়ক


ছোট ছোট লাল নীল বল নিরাবলম্ব ঝুলছে। আমি রুটি বেলতে বেলতে যাচ্ছি আর
বেলনা দিয়ে নাড়িয়ে দিয়ে আসছি এইসব বিমূর্ত সুন্দর নক্ষত্রদের। পেন্ডুলামের
মতো ওরা পর্যায়ক্রমিক গতিতে ফিরে ফিরে আসছে আর ততক্ষণে আমি একটা
একটা করে রুটি সেঁকে নিচ্ছি।
তোমার সাথে কথা বলতে গেলে রুটিগুলো সব পুড়ে যাবে। গরম চাটুতে সেঁকছি আর
দেখছি সবুজ বল হলুদটাকে আবার হলুদ বল নীলটাকে কেমন ঠোকা মেরে মেরে এগিয়ে
চলেছে। আবার ফিরে আসছে পরবর্তী রুটি সেঁকবার আগেই। এ ধরণের খেলা সচরাচর
সাদা চোখে দেখা যায় না।
এইযে গরম চুলা, চাটু, চিমটা – আসলে এরাও পর্যায়ক্রমে বিকিরিত করে এক
অনন্ত ক্রীড়াদৃশ্য। আটা মাখতে মাখতে নরম লইয়ের ভেতর যেদিন একটা আস্ত
মন্বন্তর দেখেছিলাম, সেদিনই বুঝেছিলাম, প্রতিটি সুদীর্ঘ যন্ত্রণার আড়ালে
লুকিয়ে রয়েছে এক অবশ্যম্ভাবী পদার্থবিদ্যা!
এইসব রঙিন বলগুলি কি আগেও ছিল, যখন আমার পূর্বপুরুষেরা রুটি বানাতেন!
নিশ্চয় ছিল। অন্তত বিজ্ঞান তাই বলে। তবে তাঁরা আমাকে বলে যাননি কেন, যে
আমৃত্যু ক্ষুধা একধরণের পিরিয়ডিক মোশন! চাকতা আর বেলনার অনন্ত ঘর্ষণে
সৃষ্টি হয় ক্ষুন্নিবৃত্তির দীর্ঘ উপাখ্যান!
নীলকে হলুদ, হলুদকে সবুজ – পুলিগুলো ফিরে আসছে, ধাক্কা মারতে মারতে, গভীর
অন্ধকার ভেদ করে। আমি দেখতে পাচ্ছি হাভাতে চোখেদের, টিনের থালা হাতে সারি
সারি। সবার থালায় একটা একটা করে রুটি বিলিয়ে দেবো। ওরা খেয়ে ফিরে যাবে।
তারপর আবার বসবো, আটা মাখতে...

2 comments:

  1. শেষেরটা দারুণ। বৈপ্লবিক।

    ReplyDelete
  2. অনবদ্য সব কটিই ।

    ReplyDelete

FACEBOOK COMMENT