DEHLIJ

আন্দালীব

 আন্দালীব এর কবিতা



বন্দিশ

১.

পাপড়ি সরিয়ে দেখি
এ কী
তুমিও নাজুক এত
যেন গোলাপের মত
আভা ছড়িয়েছো যে কী

২.
নিহিলতা ভেঙে উঠে আসবার মত
জলযানটির গুঞ্জন ধরে রাখি
পার হয়ে এসে ঝঞ্ঝা-মুখর নদী
তোমার কাছেই আঁকতে দিয়েছি ক্ষত

সে ক্ষত এমন বর্ধনশীল ভাবে
ছড়িয়ে পড়েছে শরীর কিম্বা মনে
দূরে ঠেলে দিয়ে নদীটির কথকতা
বাষ্পরুদ্ধ জলযানখানি কাঁপে

যদি কম্পন ভুলেই ভেবেছ তারে
দূরপাল্লার ভ্রমণের ফাঁকে-ফাঁকে
ট্যুর প্ল্যান লিখে লাভ হবেনাতো আর
পাওয়া যাবে তারে ভাবনার বিস্তারে

ভাবতে-ভাবতে যে দিন গিয়েছে চলে
নিষ্কাম ভাবে কামনায় গনগনে
চুল্লীর আঁচে সেঁকে নেয়া গেল প্রেম
মানবিক বোধ পারমাণবিক ছলে

পরমাণু জানে ভেঙে যাওয়া কত ভালো
ভেঙে যাওয়া জানে বিষণ্ণতার দিন
দু'টি পথ যেন দুই দিকে গেছে বেঁকে
পথের প্রান্তে বিস্ফোরণের আলো

সেই আলোতেই ঘটিয়েছি মধুরেণ
জলযানটির পেটের ভেতরে বসে
নৌপথে ঘোরা নাবিকের মত করে
আমাকেও লোকে ভুলতে বসেছে যেন



৩.
শ্রুতির অধিক বধিরতা নাকি ভালো
গভীর বনের নির্জনতার কাছে
আমাদের কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে
সে' কথা ভেবেই জ্বালতে চেয়েছি আলো

এত আলো তবু দেখার বাইরে যদি
থেকে যায় কোন দৃশ্যের বিস্তার
সুরের ভেতর ডুবে গেলে দু’টি পার
ক্রমহ্রাসমান হয় বাতাসের গতি

গতিময় যদি না হলো বাতাস আর
তেপান্তরের জনশূন্যতা ঠেলে
বিরানভূমির ঠিক মাঝখানে গেলে
মনে জেগে ওঠে পরিমিত হাহাকার

পরিমান যদি হিসাব করতে যাই
বিস্তর হাসি কান্নার পরে এতো
তারই আশ্রয়ে আজ ফিরে যাওয়া যেতো
আলোতে যে নাই অন্ধকারেও নাই

৪.
গানের ভেতরে জ্বলে অপরূপ-অপরূপ বাণী
সে’ সব অমল কথা বলতে চেয়েছে কারা জানি
যদিও ভুলেছি কিছু বাকিটাও মনে নেই পুরো
গানের ভেতর দিয়ে ছুঁয়ে আসা যাক সেই চূড়ো

তারপর ঢালুতায় গড়াতে-গড়াতে আসি যেই
দেখি এত সান্দ্রতা উত্তুঙ্গতা আর নেই
শিখরটা ছুঁয়ে দিলে তারপর শুধুই পতন
গানের ভেতরে শুনি সেইসব গান সারা ক্ষণ

গান যত থেকে গেছে আমাদের শ্রুতির ভেতর
গড়ে ওঠে নড়ে ওঠে সারা রাত সারা দিনভর
ধরে রাখে বাণী আর ধরে রাখে তাজ্জব সুর
গানের ভেতর দিয়ে কাছে আসে এমন সুদূর

দূরতম মেঘ জানে দূরে যাওয়া বিরহ কেমন
পৃথিবীর নাম ধরে ডেকে আনে যখন-তখন
ঝরে যেতে ভাল লাগে বলে তারা ঝরে যেতে চায়
গানের ভেতর দিয়ে প্রাণ তাকে আবার সাজায়



কনে দেখা আলো


কপিশ রঙের মেঘের ভেতর দিয়ে
যাচ্ছে দেখা সূর্য ডোবার ছবি
কনে দেখা আলোতে ভর করে

সত্য হল মিথ্যে লেখা সবই


গভীর কোন জীবন-বোধের স্মৃতি
হাতড়ে দেখি পড়ছে না যে মনে
বিপর্যাসে হারিয়েছে তারা
সঙ্গোপনে বনের নিরজনে

সে'খান থেকে স্বয়ম্ভু এক আলো
ঠিকরে আসে চকমকি পাথরে
যে' সব কথা বৃন্দ ঋষি জানে
লোকের মুখে ফসিলে-মর্মরে

যন্ত্রযুগের সূচনাতে ছিল
রহস্যতে আটকে পড়ার জ্বালা
কপিশ রঙের মেঘের ভেতর দেখি
ডানা-ভাঙা জেপলিনের জানালা

এসব কিছু ঘটতে থাকে প্রবল
সূর্য ডোবার অল্প কিছু আগে
রহস্যটা ছলকে পড়তে দেখি
কনে দেখা আলোর অগ্রভাগে


স্নেহ


তোমাকে রেখেছি স্নেহে, সঙ্গোপনে।  বাদামি
ত্বকের নিচে, মেদ ও মাংসে।  যত দূর দেখি
এনজিওশাসিত গ্রাম।  তোমার আঁকা-বাঁকানো
হেরিংবন রাস্তা ঘুরে শেষ হয়ে গেছে টেকসই
উন্নয়নের কাছে এসে।  তোমার মৌনতা-পীড়িত
ফিশারিতে আজ চাষ করেছে কারা এমন
গভীর জলের মাছ! তোমার কলহাস্য মুখর
পোল্ট্রি ফার্মগুলো যেন দপ করে নিভে গেছে।
তোমার ভোগ্যপণ্যের গ্রাফ স্খলন প্রবণ।
স্নেহের মত নিম্নগামী, পরান্মূখ এমন!
তোমার স্বনির্ভরতার ইতিহাসে ক্ষুদ্র ঋন বলে
যেন আর কিছু নেই।  তোমার কাচ-ভাঙা হাসি
বন্ধক রেখে কিনে নেব লাল হন্ডা আজকেই।

No comments

FACEBOOK COMMENT