নভেরা হোসেন
হ্যালুসিনেশন
শাহবাগ যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যায়
ভাবছিলে সন্ধ্যার আগেই পৌঁছাবে
আলো -আধাঁরীময় বইয়ের দোকানগুলো লম্বা মুখ করে আকাশ দেখছে
টুলে বসে লেবু দেয়া চা খেতে খেতে
চারপাশ দেখতেই লম্বা চুলের একছেলে প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়ালো
পকেটে বাঁশি উঁকি দিচ্ছে
চোখে তন্দ্রাচ্ছন্নতা
তালিকা ধরে বই কিনে ভাবলে আরো দু -একটা দেখা যাক
ঘড়িতে কয়টা বাজলো ?
সব দোকান হুড়মুড় করে সাটার নামিয়ে দিচ্ছে
অন্ধকার সিঁড়ি পথে একা একা
এইসব মানুষ, বই -পত্তর, আড্ডা
সব যেন ভোজবাজির মতো মিলিয়ে গেলো
সামনে থৈ থৈ পানি
পাহাড় সমান ঢেউ
ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্রোত
হাতে এক গাদা বই
চোখের চশমাটাও কোথায় হারালে
ঘুম ভেঙে মাতালের মতো দশা
তোমার হাতে একটা কাশফুল, পা জলে
এই বর্ষায় কে এমন শারদীয় হয়ে এলে ?
মন খারাপ
মন খারাপের সময় তুমি চুপ করে বসে থাকো
কথা বলতে ইচ্ছে করে না
যদি ও বলো মনে হয় প্রতিধ্বনি হচ্ছে-
চারপাশে লোকজন হাসছে , কথা বলছে
খাচ্ছে , ঘুমাচ্ছে
তুমি শুধু দেখতে থাকো ..
শুধু ভাবতে থাকো
ভাবতে ভাবতে একবার নদীর কিনারে
আরেকবার তলদেশে
সেখান থেকে খুঁড়ে আনো পুরানো মনি -মানিক্য
এইসব মনি -মানিক্য তোমাকে আরো স্মৃতিকাতর করে তোলে
একটা ডিঙি নৌকায় ভাসতে ভাসতে মাঝ দরিয়ায়
সেখানে ছিপ ফেলে বসে থাকো
নদীতে ঘন কুয়াশা
মন খারাপের তীব্রতায়
নদীর পাটাতনে পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকো ঘন্টার পর ঘন্টা,
মাসের পর মাস -
এক সময় কুয়াশা ভেদ করে রোদ ওঠে
প্রথমে মিষ্টি রোদ তারপর কড়া রোদ
একটু একটু করে রোদের তীব্রতা বাড়তে থাকে
চোখের পর্দা ভেদ করে ঢুকে পরে মগজের ভেতর
তুমি রোদ এড়াতে উল্টে শোও
পিঠ পুড়তে থাকে
শেষে তপ্ত শরীর নিয়ে জলে ঝাঁপ দাও
নদীর ঠান্ডা জলে অবগাহন
পায়ে এসে ঠোকর দেয় মাংসাশী মাছেরা
জল কেটে কেটে তীরে এসে ওঠো
আবার গা এলিয়ে শুয়ে পড়ো
ততক্ষণে মন খারাপ রোদে শুকিয়ে ড্রাই ফিশে পরিণত হয়েছে
বাড়ি ফিরে পেঁয়াজ আর সর্ষের তেল দিয়ে
ড্রাই ফিশ রান্না করে খাও
আর ল্যাপটপে চলতে থাকে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ
আলো অন্ধকারে যাই
অন্ধকার ছেড়ে যাচ্ছে অন্ধকারকে
আলো ছেড়ে যাচ্ছে আলোকে
আলো আলো অন্ধকার
অন্ধকারের আলো
চন্দ্রাবতী তুমি কোন সাগরে?
কতদূর কদম্ব পার?
হাতের বলিরেখা মুছে গেল কবে
মেহেদীর দাগ চুলের খোপা
অন্ধকার ছেড়ে যাচ্ছে অন্ধকারকে
আলো ছেড়ে যাচ্ছে আলোকে
আলো আলো অন্ধকার
অন্ধকারের আলো
Post a Comment