DEHLIJ

শোভনলাল আধারকার

গালিলিও,স্বাতী ও লাশকাটা ঘর

 


( ১ )

ষষ্টি পূজোর সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হয়ে যাবার পর আমরা তিন-চার কর্মকর্তা বসে আগামী চার দিনের কর্মসূচী আলোচনা করছিলাম মণ্ডপেরই এক কোনে বসে । সকলেরই একমত- টাকার অভাবের চেয়ে কাজের ছেলের অভাব।সবাই চায় পূজ্যর সময় আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় এসে কাপ্তানি করতে।হঠাৎ ক্লাবের দরোয়ান-কাম-“হেল্পার” মদন সর্দার দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে যা বলল তার সারমর্ম হল,”গ্যালিলিও”খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে-মুখ দিয়ে গাঁজলা বেরুচ্ছে,অতএব আমাদের যেতে হবে।হাসি-খুশি স্বভাবের মদন সাধারণত পান চিবোতে আর হিন্দি ছবির গান করতেই ভালবাসে।ওকে ওই অবস্থায় দেখে আমরাও ঘাবড়ে গেলাম।যাহক,একটা কিছু ত করতে হবে। ক্লাব ঘরের বারান্দায় উঠেই দেখতে পেলাম একটা ছেঁড়া কম্বলের উপর সে সুয়ে আছে,চোখ বন্ধ,মুখে গাঁজলা,তাতে মাছি ভন ভন করছে-সেগুলো তাড়াবার শক্তি বা ইচ্ছে কোনটাই বোধহয় ওর নেই।কিন্তু বেঁচে আছে বুঝা গেল কেননা ওর জীর্ণ-মলিন পোশাকের অন্তরাল থেকে বুকের ধুক-ধুঁকনি দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি হাঁটু গেড়ে বসে ওর মেঝেতে পড়ে থাকে বাঁ’হাতটা তুলে নিয়ে নাড়ীর স্পন্দন অনুভব করতে চেষ্টা করলাম-নাড়ী খুব হালকা আর অনিয়মিত।ইশারায় সঙ্গীদের জানালাম,অবস্থা সুবিধের নয়; বললাম,”হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে”।


“উটকো বিপদ,যাহোক”,সুমন বিরক্তি প্রকাশ করল।
আমি ম্লান হেসে হাত উলটে বললাম,”কি আর উপায়?”
ইতিমধ্যে মদন একটা অটো-রিক্সা ধরে এনেছে।ধরাধরি করে ওকে তুললাম গাড়িতে।মদন সঙ্গে বসল।সুমন,হেমন্ত আর আমি আমার গাড়িতে আসছি বলে ওদের আগে পাঠিয়ে দিলাম।এসব ব্যাপারে মদন বেশ পাকা-পোক্ত;পাড়ার কয়েক জনকেই ও আগে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়েছে।
ওকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে আমরা যখন পাড়ায় ফিরলাম তখন অনেক রাত হয়ে গেছে,তাই যে যার বাড়ি ফিরলাম, আগামী কাল সকাল সকাল সপ্তমী পূজা-আমাদের সকলকে মণ্ডপে থাকা প্রয়োজন।
অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম এলোনা।আমার সারা মন অধিকার করে রইল “গ্যালিলিও”।এই নামটি আমাদেরই দেওয়া।গলির মাথায় বড় রাস্তার ওপারে বট গাছটার পাশে যে লাইট-পোষ্টটি আছে তারই নিচে ও দাঁড়িয়ে থাকত।লম্বা সাদা-কালো চুল দাঁড়িতে ভরা মুখে একজোড়া উজ্জ্বল চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যেতনা।পরনে অতি মলিন প্যান্ট আর কালো কোর্ট।পোশাকের আসল রঙ যে কি ছিল আমরা কেউ জানিনা।বাঁ হাতে থাকতো একদিনের পুরানো ইংরাজি খবরের কাগজ, ”স্টেটসম্যান”।কাঁধে থাকত একটা মলিন কাঁধে-ঝোলা ব্যাগ।ওর ডান হাত সর্বদা থাকত আকাশের দিকে তাক করা আর সেদিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে এক অবোধ্য ভাষায় কি যেন বলত।কারুর সঙ্গে সাধারণত কথা বলত না।ইচ্ছে হলে কখনো কখনো হাত নামিয়ে কোন পথচারীকে ইশারায় কাছে ডেকে শুদ্ধ ইংরাজিতে বলত,”গিভ মি ওয়ান রুপি ফর টী”কেউ দিত , কেউ না-শোনার ভান করে চলে যেত।হাতের খবরের কাগজটার অবস্থা দেখে বুঝা যেত,তার আদ্য-পান্ত পড়া হয়ে গেছে।


( ২ )



দুপুরে আর রাত্রে খাবার সময় হলে বাজারে সর্দারজীর ধাবায় চলে যেত-ওখানে ওর প্রতিদিনের খাবার বরাদ্দ থাকত-ফ্রি।বিনা বাক্যব্যয়ে সেখানে মোটা মোটা দুখানা রুটি আর সবজী শেষ করে আঁজলা ভরে রাস্তার কলের জল খেয়ে আবার নিজের জায়গায় ফিরে যেত।ওকে আমরা কেউ বসতে দেখিনি।অনেক রাতে ক্লাবের খোলা বারান্দায় ছেঁড়া কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ত।শিত,গ্রীষ্ম,বর্ষা সব ,ঋতুতেই ওকে ওই একই পোষাকে আর একই স্থানে দেখে এসেছি গত সাত-আট বছর।কবে বা কখন য় এখানে এলো কেউ হিসেব রাখিনি,ও যেন একটা আগাছায় মত ওখানে গজিয়ে গেছে।মনে হতো যেন অনন্ত কাল ও ঐ ভাবেই আছে।কেউ বলত,”মহাকাল”,কেউ বলত পুলিশের টিকটিকি।আবার কেউ বলত “লোকটা বড় বৈজ্ঞানিক ছিল,গবেষণা করতে করতে পাগল হয়ে গেছে;আবার কেউ কেউ গল্প বানিয়ে বলত,”প্রেমে বিফল হয়ে বেচারার এই অবস্থা”।আমরা ওর চেহারা আর আকাশের পানে তাকিয়ে বিড়বিড় করার জন্যে নাম দিয়েছিলাম,”গ্যালিলিও”।এইসব গল্পের কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে কেউ জানতো না।ধাবার সর্দারজী নাকি ওর সম্বন্ধে কিছু কিছু জানে,কেননা রাতে খাবার সময় দোকানে কেউ না থাকলে আর মেজাজ ভাল থাকলে দু’একটা কথা বলতো।


কেন জানিনা এই রহস্যজনক মানুষটির সম্বন্ধে অতীত জানার জন্য একটা অদম্য ইচ্ছা বোধ করছিলাম বহুদিন ধরেই।তাই একদিন রাতে খাবার পরে দেরি করেই চা-খাবার বাহানায় সর্দারজীর ধাবায় চলে গেলাম। দূর থেকে দেখলাম গ্যালিলিও কলের থেকে অঞ্জলি ভরে জল খেয়ে চলে গেল।এই সময় সর্দারজীর দোকান বন্ধ করার সময়।এটাই সুযোগ বুঝে অন্য রাস্তা ধরে ধাবায় হাজির হয়েছিলাম।সর্দারজীকে বললাম,”খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে,সাহজী,গুপ্তার দোকানে বলল দুধ খতম হয়ে গেছে,এক কাপ চা খাওয়াতে পারবে ?”
সর্দারজী একগাল হেসে দাড়ি চুলকে বলল,”এতো আমার খুস নসীব বাবুজি,আপনি আমার ধাবায় ত আসেন না।বৈঠিয়ে আভি লায়া।“স্থানীয় ক্লাবের হর্তাকর্তা বলে বাজারের দোকানদারেরা আমাদের সমীহ করত একটু বেশিই।
আমি সামান্য লজ্জিত হয়ে বললাম,”তা নয়,সর্দারজী-গুপ্তার দোকান সামনে পড়ে তাই ওখানেই যাওয়া বেশি হয়।“
“কৈ বাত নেহি,স্যার; বৈঠিয়ে দাদা”,বলে সর্দারজী চা বানাতে লেগে গেল।
সেই সময়ে আমি মনে মনে ঠিক করে নিলাম,কথাটা কিভাবে পাড়বো।
ধাবার অপরিষ্কার বেঞ্চিতে বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে একমুখ ধোঁয়া ছাড়তেই সর্দারজী একটা বড় গ্লাসে এক গ্লাস গাড় আর ঘোলাটে চা এনে হাজির করল।একমুখ দাঁড়ি-গোঁফের আড়াল থেকে হলদে দাঁত বের করে বলল,”লিজিয়ে দাদা”।পকেট থেকে রুমাল বের করে ধূমায়িত গরম চায়ের কাপটাকে সাবধানে হাতে নিলাম।
একটা চুমুক দিয়েই আমার মুখটা বেঁকে গেল-চায়েতে জল মোটেই দেয়নি-শুধু ঘন দুধে চা পাতা ফুটিয়েছে আর চিনি কমসে কম চার-চামচ ঢেলেছে।তবু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলাম,”সুক্রিয়া,সর্দারজী,চায়ে বড়িয়া বানায়া।“
সাদা দাঁড়ির আড়ালে একগাল হেসে সর্দারজী বললেন,”আপকে লিয়ে স্পেশাল বানায়া বাবুজি”।
ঠিক সেই সময় আমি সুযোগ বুঝে আসল কথাটি পাড়লাম,”সর্দারজী,ওই দাড়িওয়ালা পাগলা বাবু গ্যালিলিও সম্বন্ধে অনেক কথা শুনা যায়,আপনার ধাবাতে ত খেতে আসে,আপনি কিছু জানেন নাকি”?
“কোন গ্যালিলি স্যার”?,অবাক হল সর্দারজী।


(৩)

“গ্যালিলি নয়,গ্যালিলিও,ওই যে পাগলা বাবু ধাবায় খেতে আসে।“
এবার বোধহয় সর্দারজী বুঝতে পেরে বলল,”ও আপনি রায় সাহেবের কোথা বলছেন”?
আমি সামান্য হেসে বললাম,”ও ওর নাম রায় বুঝি?”
সর্দারজী রাতের মতন দোকান বন্ধ করার আগ গোছাতে গোছতে বলল,”হ্যাঁ,হামিও শুনেছি উনার নাম কি যেন কি এস রায়-কি র ণ শঙ্ক র রায়”
আমি পদ-পুরন করলাম,”হ্যাঁ হ্যাঁ কিরণ শঙ্কর রায়”।মনে মনে ভাবলাম,এবার বুঝি রহস্যের জাল উন্মোচন হতে পারে।
সর্দারজী অনেকক্ষণ পর্যন্ত কিছু না বলে চুপ করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইল।আমি অদম্য উৎকণ্ঠা নিয়ে ওর পানে তাকিয়ে রইলাম।
অনেক পরে রাতের ঝড়ো পাতার স্বরে সর্দারজী বলল,”আমিও বিশেষ কিছু জানিনা স্যার,এই লোকজন যা বলে তাই আরকি-ওঁ নাকি বাঙাল সে আয়ে আর কে এস রায় নাম”।এ পর্যন্ত বলেই আর কিছু না বলে দোকানের ভিতর গিয়ে গোছগাছে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
আমি বুঝলাম,সর্দারজী আমাকে কিছু লুকচ্ছে-আর কিছু বলবেনা।
আমিও নমস্কার জানিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম।কিন্তু আমার মন বলছিল,উনি অনেক কথা জানেন,কিন্তু বলতে চাইছেন না।
এইসব ভাবতে ভাবতে অনেক রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা।ঘুম ভাঙল সুমনের ডাকে,আর সপ্তমীর পূজার ঢাকের আওয়াজে।তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে মণ্ডপে পৌঁছলাম।


এর পরের চারদিন পূজ্যর কাজের চাপে কোথা দিয়ে যে সময় চলে গেল জানতেও পারিনি।প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ল গ্যালিলিওর কথা ।মনে মনে লজ্জিত হলাম ওর খবর না নিতে পারার জন্য।বিসর্জনের পরেই মদন সর্দারের খোঁজ করলাম।শুনলাম সে নাকি সপ্তমীর দিন সকালেই দশ দিনের ছুটি নিয়ে দেশে চলে গেছে।মনটা ভীষণ অস্থির হয়ে উঠলো। রাতে ঘুম এলোনা মোটেই।কেবলই গ্যালিলিও মুখটা মনে ভেসে আসছিল। সকাল হতেই সুমনকে ডেকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম।যে ওয়ার্ডে ওকে ভর্তি করানো হয়েছিল সেখানে কেউ খবর দিতে পারলনা।শেষে এক জানাশুনো জুনিয়ার ডাক্তারের সাহায্যে প্রধান রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে খোঁজ পেলাম।রেজিস্টারে নামের জায়গায় লেখা ছিল “বেগার”।কিন্তু,সময়,তারিখ আর জামা-কাপড়ের বিবরণ আর ফটো থেকে বুঝা গেল-সেই।যেহেতু সেই রাত্রে আমাদের পৌঁছাবার আগেই মদন ওকে ভর্তি করিয়েছিল বেনামি-বেওয়ারিশ রুগী হিসাবে তাই নামের যায়গায় ওরা “বেগার” লিখেতে বাধ্য হয়েছিল।খাতার শেষ কলমে লেখা ছিল যেদিন ভর্তি হয় তার পরের দিন ভোর রাতে অর মৃত্যু হয়েছিল আর ৪৮ঘন্টা পর্যন্ত কেউ “বডি” না নেওয়াতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের জন্য লাশকাটা-ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ভীষণ উদাস মনে বাড়ি ফিরে এলাম-নিজেকে ভীষণ অপরাধী বলেও মনে হচ্ছিল।হঠাৎ ধাবার সর্দারজীর কথা মনে হলো। প্রায় একদৌড়ে পৌঁছে গেলাম ধাবায়।দুপুরের খাবার সময় পেরিয়ে গিয়েছিল-সর্দারজী একাই বসে ছিলেন দোকানে।আমাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার জানিয়ে বলল,”আইয়ে,বাবুজি”।
আমার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,”ক্যা হুয়া,তবিয়ত ঠিক হ্যাঁয় না? চায় বানাউ?”
আমি ঘাড় নেড়ে জানালাম,”হ্যাঁ”।





(৪)


সর্দারজী চা বানাতে বানাতে জিজ্ঞেস করল।“বাবুজি,রায় সাব তিন-চার রোজ আসেনি।আমি হর দিন ঊনকে লিয়ে রোটি লেকর ইন্তেজার কিয়া,বহ নেহি আয়ে তো হামনে সোচা আপনাদের পূজাকি লঙ্গর মে খানা মিলে ইসলিয়ে ধাবা মে আসেনি।আপনি জানে কোথায় আছে ওঁ? আপনার ক্লাবে খোঁজ করেছিলাম-কেউ বলতে পারল না।“
আমার মুখে কোন কথা যোগাল না অনেকক্ষণ।সর্দারজী উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে ছিল;ওদিকে চায়ের সসপ্যান থেকে চা উপচে পড়ে ষ্টোভটাই নিবে গেল।সেদিকে সর্দারজীর খেয়ালও ছিলনা।অনেক পরে ভোর রাত্রের ফিসফিসে হাওয়ার শব্দে আমার মুখ থেকে কটি শব্দ বেরুল,”আমাদের গ্যালিলিও,মানে আপনার রায় সাহেব আর এই দুনিয়ায় নেই সর্দারজী”।


বৃদ্ধ সর্দারজী যেন আঁতকে উঠলো;সবকিছু শোনার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,”আহে গুরু উনকা মঙ্গল করে,লেকিন এমন কেন হয় বাবুজি ?”


আমি প্রশ্ন চিহ্নের মত তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।


সর্দারজী দেওয়ালে টাঙানো গুরু নানকের ছবিটার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বলতে লাগল,”বাবুজি সেদিন আমি আপনাকে সত্যি বলিনি।আজ তিনি নেই তাই বলতে বাধা নেই-আমি ওঁর বারেমে থোড়া বহুত জানি।রায় সাব বহুত বড়া ঘরের ছেলে ছিলেন;চার সাল বাহার-কা দেশ মে ভি পড়াই কিয়ে থে।পাশের বাড়ির গরিব ঘরকি লড়কি স্বাতীসে প্রেম থা।বিলাত সে বাপিস আকর ওসসে শাদি কিয়া থা।বাপ,জমিন্দার সাহেব রায় সাহেব কো ঘরসে নিকাল দিয়া থা।তব ভি ও দোনো খুশ থে।আমার বাবা ঔর হামি জমিন্দার সাবকা ড্রাইবরী করতাম।জমিন্দারী যানে সে হামি চলে এলাম এই শহরে।“
অনেকক্ষণ একনাগাড়ে কথা বলার পর বোধহয় দম নেবার জন্যই থামলেন।আমি ওর মুখের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইলাম।


একটু পরে সর্দারজী মুখ তুলে আবার বলতে শুরু করলেন,”স্বাতী কে বিয়ে করে রায় সাব কিন্তু সে সুখ জ্যাদা দিন ভোগ কর নহি পায়া।স্বাতির থা বহুত বড়া বিমারী-খুন কি ক্যান্সার।সাদি কা একসাল মে হি সব খতম হো গিয়া। রায় সাব বিবাগী হয়ে কোথায় চলে গেলেন কেউ জানলো না।তারপর পঁচিশ সাল পরে ওর সঙ্গে দেখা এই শহরে।আমিতো ওঁকে চিনতেই পারেনি বাবুজি,লেকিন একদিন উনকা ব্যাগ-সে এই ফটোটা গির পড়া।“বলে একটি মলিন সাদা-কালো ফটো দেখাল। বিয়ের পরে তোলা যুগল ছবি।আমি ছবিটা হাতে নিতেই সর্দারজী কাঁদ কাঁদ স্বরে বলল,”বাবুজি আমি ফটোটা চুরি করিনি-রায় সাবই আমাকে দিয়ে আউর বলে- রাখলে তেরি পাস,কিসি কো মত দেখানা,কিসি কো মত বোলনা”।আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বাবুজি,কভিভী তার খিলাফ হয়নি”।সর্দারজীর চোখ ছল ছল করছিল,অপ্রস্তুত অবস্থাটা ও দোকানের ভিতরে চলে গেলেন।আমি ফটোটার দিকে শেষবারের মত দেখে নিয়ে সেটাকে খামের মধ্যে ভরে সর্দারজীর চেয়ারের উপর রেখে রাস্তায় নেমে এসে ভাবতে লাগলাম,বাহ‌রে ভগবান,এত বড় একটা মানুষের মৃতদেহ “আনক্লেইমড”বডি হিসাবে ছাত্ররা ল্যাবরেটরির টেবিলে রেখে কাটাকুটি করছে আর সেই লোকটি আকাশ পানে একহাত তুলে কি করছিল?-ভগবানের দরবাদে ফরিয়াদ নাকি অগণিত নক্ষত্র মাঝে ওর প্রেমময়ী স্বাতীকে খুঁজছিল?

No comments

FACEBOOK COMMENT