DEHLIJ

ঔরশীষ ঘোষ

দিল্লির মুখরা মেয়েটির জন্য দুটো কবিতা





কখনো চাইনি আমি তুমি কেবল আমার হয়েই থাকো
সে কথা বলার আমি কেউ নই!
আমি শুধু বালির ওপর নখের আঁচড় কেটে রাখি
যেখানে বাতাস তার রাস্তা হারিয়েছে
আর নদী তার নিজের খেয়ালে মুছে দিয়ে যায় রোজ
পাথরের দেহ থেকে ফুলের পরাগ

এখন মেঘেরা আমার ঘরের ভেতর ঢুকে বলে, "তবে আজ হোক'
প্রতিটা রাস্তা আমাকে মিনতি করে "হারিয়ে যেও না'
এখন প্রতিটা দরজা আমাকে মনে করিয়ে দেয়
চাবি আমি হারিয়ে ফেলেছি- এখন তোমার দিকে তাকালে মনে হয়
মায়াবী দ্রবণে কারা যেন আমার শরীর ডুবিয়ে রেখেছে

ভেবেছিলাম এভাবেই ক্ষয় হয়ে যাবো
মাটির গভীরে মিশে যাবো হলুদ পাতার মত নির্ভীক
আস্তে আস্তে হ্রাস পাবে চেতনার যন্ত্রনাদায়ক আলো
যা আমাকে কয়েকশো বছর ঘুমোতে দেয়নি
জাগিয়ে রেখেছে অন্য এক অলীক শ্মশানে
যেখানে আমি নিজেই নিজের মুখাগ্নি করি প্রতিদিন

কখনো বলিনি তুমি দুরত্ব কমাও এইবার
যতটা কাছে এলে চোখের ভিতর আকাশের ছায়া পড়ে
আমি আশ্রয় খুঁজিনি কখনো, তুমি জানো
আকাশ আমার বড় প্রিয়, সমুদ্র আমার বড় প্রিয়
ঝড়ের সন্ধ্যায় একটা কাটা পড়া ঘুড়ির মত
তোমার আকাশে আমি হারিয়ে গিয়েছি সেই কবে
এখন এক নোঙরবিহীন জাহাজের মতো ভেসে আছি
বিস্মৃত এক সুগন্ধীর মৃদু রেশ হয়ে তোমার শরীরে


২!

তুমি একদিন ছেড়ে যাবে এই ভয়ে
কাল মাঝরাতে উঠে বসে চারপাশে শুনেছি ভয়ার্ত
পাখির ডানার আর্তনাদ -
যেন কোনও অরণ্যের মধ্যে দিয়ে
ছুটে যাচ্ছে অবিশ্রাম হাওয়া, আর তার শব্দে
জেগে উঠছে মাটির গভীর থেকে
শতাব্দী প্রাচীন কোনও ঘুমন্ত আতঙ্কের অবয়ব

তুমি একদিন চলে যাবে, যেন চমৎকার মিলনের
পর ঘুম থেকে উঠে দেখবো সমস্ত জানলা খোলা
হুহু রোদ্দুরে চামড়া খসে যাচ্ছে, চোখের পলক
পুড়ে যাচ্ছে, আর এক জ্বলন্ত দেশলাই
যেমন সহসা তীব্র হয়ে উঠে নিভে যায়, সেভাবে
হ্যাঁ, সেভাবেই তোমায় জড়িয়ে ধরি
তোমার বিরক্ত মিশ্রিত স্বরে তখনো কী আস্কারা!

এমন অমোঘ মনে হয় তোমার বিচ্ছেদ
অগাস্টের আকাশের মত রহস্যময়তার মোড়কে
তোমার নগ্নতা আর প্রাসাধনী সাজ
আমাকে বিমুগ্ধ করে, কিন্তু শান্তি পাই না
যেন এক কিশোর বালক
গ্রীষ্মের অসহ্য রোদে ছাওয়া ছাদে খুঁজে যাচ্ছে
মাথার ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়া এরোপ্লেনের ছায়া

আকাশ আবার শূন্য হয়, ঘরও ভরে ওঠে একদিন
তুমি চলে যাবে, অসম্ভব নয়,
যাওয়ার আগে শুধু মনে রেখ
যেটুকু তোমার ছিল আমার ভিতর---  সঙ্গে নিও

No comments

FACEBOOK COMMENT