DEHLIJ

পীযূষকান্তি বিশ্বাস

সম্পাদকীয়



বাহ রে বসন্ত, এপ্রিলে এমন কি আর সুবাস ছিলো,  চানক্যপুরী জুড়ে নেমেছো বেশ কেশমঞ্জরী বিছিয়ে।  নাকি হরিয়ালি আহবান ছিলো ইন্দ্রপ্রস্থের নাকি প্রতিবাদী কৃষকদের ডাকে না এসে থাকতে পারোনি ?  আরাবল্লীর পাষাণ ফাটিয়ে তুলে ধরেছো তার পুষ্পসজ্জিত নধর সুহাস্য  মস্তকখানি । কোন লক-ডাউন, কোন করোনা রুখতে পারেনি তোমায় । 


দীর্ঘ বৎসরব্যাপী কোয়ারানটাইন ও স্বঘোষিত হাইবারনেট দিয়ে, এই ঘটমান প্রেজেন্ট টেন্স, এখানে খুঁজে পড়ার কিছু নেই । যা কিছু ভূত, যা কিছু ভবিষ্যৎ এই জীবদ্দশায় তার ফয়সালা হোক । অমরত্বের কোন দাবী নেই । অমৃতের কোন সুধা  এই পঙক্তিমালায় লিপিবদ্ধ নেই । তবুও দেহলিজ এলো । দেহলিজ এলো দিল্লি জুড়ে । তার সাফল্য, ব্যর্থতা, আমাদের এই খুঁটিনাটি যা আলাউদ্দিনের সিরিফোর্টে কবর দেওয়া আছে । ইতিহাস বলে যদি কিছু থেকে থাকে,  আমরা কখনো সংজ্ঞাবদ্ধ করিনি ।


দেহলিজ কি থেমে ছিলো ? দেহলিজ কি থেমে যাবে ? এই সব গতানুগতিক ও রেগুলার প্রশ্ন । এবং তার উত্তরগুলি লালকিলার দেওয়ালে দেওয়ালে লিপিবদ্ধ । ক্রোনোলজিক্যালি । কোডেড । এনক্রিপ্টেড ।  বরং আমরা চলুন বাংলায় অন্য কিছু লিখি যা দিল্লিজাত, দিল্লি স্নাত । আমরা কিছু দামাল, আমরা কিছু কামাল এই  নিজামউদ্দিনের সবুজময় সুন্দর নার্সারিতে কিছু তার বীজ পুঁতে যাই । 


ইন্দ্রপ্রস্থে এরপর কি কখনো আবার পৌষ আসবে ? আর যদি আসে, পৌষের রোদ শেষে  কি সম্রাট শেরশাহ বাতাবী লেবুর গাছে ঝুলিয়ে দেবে চাঁদ  ?  হুমায়ূন টম্বে আর একটি জ্যোৎস্না রাতের ইশারায় আসবে কি চৈত্র ?  যদি কোন শিল্প ভাবনা থাকে, আর তার যদি থাকে কোন ইতিহাস ,  এই ইন্ডাস্ট্রি কলুষিত যমুনাপারে বসন্ত ফির-সে আসবেই । 


হুম, দেহলিজ তেমনই বিশ্বাস করে । 


আর কিছু ততটা লাল নয় যতটা একডালি শিমুল দাবী করে । যে আকাশে আমরা দেখেছি ঝুলে থাকা সূর্য যে ভাবে সে ক্রমশ ডুবে যায় সন্ধ্যার হিমে, আমরা ভেবেছি ওটাই তার অন্ধকার । যতটুকু জানা যায় সেটুকুই আলো । আমরা যেভাবে তার রোদ গায়ে দিয়ে সফদরজংগের উপর ডেকে ওঠা ময়ূরকে দেখি । ওটাই আদতে সঠিক নীল । একখানা গোটা আকাশ কখনোই এত নীল হতে পারে না । 


এতোটা গেরুয়াও কখনো বসন্ত হতে পারে না । দেহলিজ বুকে একঝাঁক টিয়া উড়ে যায় । কার বসন ওড়ে ঐ দিগন্ত বিভাজিকায়,  সে কোন কৃষক হতে পারে, কখনোই শাসক নয় । সে প্রজাপালক হতে পারে, কখনো ব্রহ্ম নয়, সে ইতিহাস হতে পারে , ভূগোল নয় । আমরা জানি  , তবুও সে চরাচর । প্রতিকূলতার মাঝে আপন শিকড় জমিয়ে দেওয়ার নাম সংগ্রাম, রক্তের আবীরে রাঙ্গা রাজধানীর বুকে সবুজে ঘেরার নাম অস্তিত্ব, আর আরাবল্লি রিজ ফাটিয়ে ঈষৎ বেগুনী কুড়ি ফুটিয়ে  নিজের অধিকার ঘোষণা করার নাম দেহলিজ ।  


এতোটা কিছু একটা নদীর না জানলেও চলে । এতোটা পথ হেঁটে এসেছে, সে এক শ্রান্ত পথিক, আমরা তাকে ভক্তি করি । আপনিও তাকে ছবিতে আঁকুন । একটা ছবির পাশে আমার নিজের কোন অস্তিত্ব নেই ।  আপনি ভাবলেও নেই । আপনি ভালো আছেন, আমাদের একশো ত্রিশ কোটি ভালো নেই । আমরাও হয়তো একদিন ছবি হয়ে যাবো, উৎসর্গ করে যাবো যাবতীয় ব্রাশ, রং , ক্যানভাস । এতো কিছু একজন সমুদ্রের না জানলেও চলে । সমুদ্র মহান, সে ইতিহাসের মতো সব কিছুই ফিরিয়ে দিতে চায় । 


আমরাও কি ফিরিয়ে দেবো এই বসন্ত ? এই আসন্ন দোল পূর্ণিমা ? আপনারা যারা এই আম্রকুঞ্জে গেরুয়া ডেকেছেন, আমরা কি তাদের ফিরিয়ে দেবো হিমসাগর, চৌষা ? মহান হবার পাঠ কি একমাত্র নিসর্গ কিনেছে ? আমাদের রক্তে লেখা হরফরেখা কি তাদের বিন্ধ্য পর্বত ফাটিয়ে দিতে পারে না ? 


আমি সেই সাহজানাবাদের মহান যাদুগরকে ক্ষমা করে দিয়েছি । দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে সে স্টেজ করেছে, বইমেলা করেছে । দেহলিজ আর কোন ম্যাজিকে আস্থা রাখে না । কোন বাস্তবেও না । দোজ আর পাস্ট । বরং আমরা কিছুটা হেঁটে যাই পিছন দিকে, রিভার্স ইঞ্জিয়ারিং । যেদিকে আমার বন্ধু গেছে গত শ্রাবণে । আর এই সেদিন নিজের জীবনকে লিখে দিয়ে কুমুদি চলে গেলেন । ঘুম আসছে, আধা-আদ্র বর্ষণের অপেক্ষায় কাটিয়ে দেবো আস্ত এক বীজঘুম - যার ভিতর আগামী বসন্তপর্বের অঙ্কুরোদ্গমের ঠিকানা লেখা আছে । 





  


 




 

 

  

    



  



  


5 comments:

  1. শক্তপোক্ত সম্পাদনা।

    ReplyDelete
  2. বাসন্তিক দেহলিজ স্বাগত। চমৎকার সম্পাদকীয় প্রতিবেদন।

    ReplyDelete
  3. একমেবাদ্বিতীম সম্পাদকীয় । ভাব ও হাতের জোর দুটোই মজুত । পড়তে ভালো লাগছিল । তুমি ভালো থেকো ।তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে ।

    ReplyDelete
  4. অসাধারণ তোমার গদ্য শক্ত চাবুক--আবার কখনো সবুজ কলমিলতা--দেহলিজ অশ্বমেধের ঘোড়া--এগিয়ে যাক--অনেক অনেক শুভেচ্ছা--ভালবাসা

    ReplyDelete
  5. অসাধারণ তোমার গদ্য- শক্ত চাবুক--আবার কখনও সবুজ কলমিলতা--দেহলিজ অশ্বমেধের ঘোড়া--গড়ে তুলুক সাহিত্যের মুক্তাঞ্চল--অনেক ভালবাসা
    কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য

    ReplyDelete

FACEBOOK COMMENT